একজন সমাজ কর্মী, মানবাধিকার কর্মী বা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে পরিচয় করাতে বেশ সাছন্দবোধ করি। তবে এই বিশেষণগুলোর জন্য যে পরিমান শ্রম ও অধ্যবসায় প্রয়োজন তার ধারের কাছেও যেতে পারিনি। দেশের মানুষের জন্য যে মৌলিক অধিকারগুলোর কথা পাঠ্যপুস্তকে জেনে এসেছি তার অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় ডাক্তার, নার্স, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ঔষধ ডায়াগনোসিস থাকা জরুরি। তবে আমরা কোন ভাবেই রোগীর যাতায়াত নিয়ে ভাবি না। কারন স্বরূপ বলা যায়, এ ব্যাপারে আমাদের তেমন কোন শিক্ষা দেয়া হয় না। হয়ত রোগীর সঠিক যাতায়াতের ব্যবস্থা না করাতে পেরে অনেকেই মারা যাচ্ছে। এ নিয়ে সরকারি বেসরকারি কোন গবেষণাও হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। আমি কাজ করতে চেষ্টা করছি সেই সকল রোগীর যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য যারা এই যাতায়াতের কারনে মৃত্যুবরণ করছে। আরও চেষ্টা করছি দেশে এ্যাম্বুলেন্স চলাচলের মানদণ্ড নিশ্চিত করতে। স্বাধীনতার পর থেকে এদেশে এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তেমন কোন কাজ হয়নি। ফলে এ্যাম্বুলেন্স কিরূপে হবে, কারা এই এ্যাম্বুলেন্স পরিচালনা করবে, সরকার রোগী যাতায়াতে কিধরণের ভুমিকার রাখবে, বেসরকারি এ্যাম্বুলেন্স কোন নীতিমালায় এ্যাম্বুলেন্স পরিচালনা করবে তার একটা রূপরেখা থাকা অত্যান্ত জরুরি। এই রূপরেখা না থাকায় অনেকেই অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এর আগে এ্যাম্বুলেন্স চলাচল নিয়ে তেমন কোন কিছুই ছিলনা। সাধারণ যানের নিয়মেই চলতে ছিল। অনেক চেষ্টার শেষে নতুন এই আইনে এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সরকার কয়েকটি কলাম জুড়ে দিয়েছে। যদিও নিবন্ধন, ট্যাক্স, টোল, ফেরীর চার্জের সব খরচ অন্যান্য যানের মতই আছে। তবে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ যে, দেরীতে হলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ চালু করেছে। এই সেবায় এ্যাম্বুলেন্সের মত সেবাকে ২য় স্থানে প্রাধান্য দিয়েছে। যারা ৯৯৯ সম্পর্কে জানেন তাদের এ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজনে এখান থেকেই গ্রহন করতে পারেন। দেশে সরকারী এ্যাম্বুলেন্সের অপ্রতুলতায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর এ্যাম্বুলেন্স সেবা, বে-সরকারী ব্যক্তিমালিকানাধীন এ্যাম্বুলেন্স ও সিটিজেনের সমন্বয়ে যথাযথ অর্থের বিনিময়ে দিচ্ছেন। বেশ তিক্ত অভিজ্ঞতা আর সমাজে এ্যাম্বুলেন্সের ভূমিকা তুলে ধরার জন্য ২০১৪ সাল থেকে আমি কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সরকারী বেসরকারি বিভিন্ন মহলে আলোচনার স্থান তৈরিও হয়েছে। ডিজিটাল দেশের অংশীদার হিসেবে এ্যাম্বুলেন্সকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভাড়া নেবার প্রথা চালুতে আমি ভূমিকা রাখতে পেরেছি। এমনকি দেশের জাতীয় দুর্যোগে (শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, চক বাজার চুড়ির হাট্টা, বনানি এফ আর টাওয়ার, গুলশান, যাত্রাবাড়ী, রাজধানী মার্কেটের অগ্নিকান্ড) বেসরকারি এ্যাম্বুলেন্স বিনামূল্যে যে ভূমিকা রেখেছে তার ছিল মানবতার মুকুট স্বরূপ। এই পরিবর্তনের জায়গাগুলো তৈরি করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করি। বর্তমানে দেশে ৬৪ জেলার ১০৩৭ জন এ্যাম্বুলেন্স মালিকের সমন্বয়ে অলিখিত একটি গোষ্ঠীর উপদেষ্টার স্থানে নিজেকে রাখতে পেরে আমি গর্বিত। এই গোষ্ঠীকে তাদের যথাযথ দায়িত্ব ও অধিকার নিশ্চিত করতে আমার প্রচেষ্টা থাকবে অবিচল। তাদের সকলের অভিজ্ঞতা, বিচক্ষণতা, সেবা ও পেশাগত শিষ্টাচার দেখার প্রয়াসে তৈরি বিডি এ্যাম্বুলেন্স ডট কম। যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, রোগী যাতায়াত সেবাসহ অন্যান্য জরুরি সেবায় ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা।